জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা

 মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান হাফিজাহুল্লাহ (জন্ম: ৫ জুলাই ১৯৫০) একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, লেখক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সংস্থা আল হাইআতুল উলয়া ও সর্ববৃহৎ শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ার মহাপরিচালক, গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব, মাসিক আল জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমীর। তার রচিত তাফসীর গ্রন্থের নাম তাফসীরে বুরহানুল কুরআন

জন্ম ও বংশ 

মাহমুদুল হাসান ১৯৫০ সালের ৫ জুলাই ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত চরখরিচা নামক গ্ৰামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা গালিমুদ্দিন আহমদ ও মাতা ফাতেমা রমজানী।

শিক্ষাজীবন 

তিনি নিজ পরিবারেই শিক্ষাজীবনের সূচনা করেন। চরখরিচা বাজারের কারী আব্দুর রশিদের কাছে কুরআন ও চরখরিচা স্কুলে প্রাথমিক বাংলা শিক্ষা গ্রহণ করেন। তারপর ময়মনসিংহের জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তার পিতা মারা যান। পরবর্তী বছরের রমজান মাসে তার মা মারা যান। এরপর ময়মসিংহের জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৭ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে জালালাইন জামাতে অধ্যয়নকালে মাদ্রাসার মহাপরিচালক শামসুল হক ফরিদপুরী তাকে পাকিস্তানের মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর সান্নিধ্যে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি পাকিস্তানের জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় মেশকাত জামাতে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর তত্ত্বাবধানে সহীহ বুখারী অধ্যয়ন করেন। তারপর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন, যা ছিল পাকিস্তানের বেফাকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ফলাফল। তারপর ২৮ দিনে তিনি কুরআন মুখস্থ করেন।[১] স্বীয় ভাই নুরুদ্দীনের অসুস্থতার খবর শুনে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭০ সালে তিনি পুনরায় পাকিস্তানে চলে যান এবং জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় উচ্চতর পড়াশুনা করেন। মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর রচিত সুনান আত-তিরমিজীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “মাআরেফুস সুনান” রচনায় তিনি সাহায্য করেন। তিনি মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর নির্দেশে “আল ইমাম আবু ইউসুফ : মুহাদ্দিসান ওয়া ফকিহান” নামে ৩ খণ্ডের একটি কিতাব রচনা করেন।

তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেঃ মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরী, ইদ্রিস মিরাঠী, ওয়ালি হাসান টঙ্কি, হেদায়েতুল্লাহ, ওমর শানকীতী, সলিমুল্লাহ খানজাফর আহমদ উসমানিমুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি সহ প্রমুখ। 

কর্মজীবন 

শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর যশোর রেলস্টেশন মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনের সূচনা করেন। একই সময় যাদবপুর মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যশোর থাকাকালে আবদুল্লাহ দরখাস্তির মাধ্যমে যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসার ভিত্তিস্থাপন হলে কাজী মুতাসিম বিল্লাহ তাকে যাত্ৰাবাড়ি নিয়ে আসেন। তিনি যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় ৬ মাস শিক্ষকতার পর পাকিস্তানে চলে যান। তারপর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের সদর দপ্তর জামিয়া ফারুকীয়া করাচিতে যোগদান করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি পুনরায় যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ১৯৮০ সালে তিনি এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি গুলশান সেন্ট্রাল আজাদ মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটির খতীব।[৪][৫] মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমীর।[৬][৭]

২০০৯ সালে মক্কার “আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার” এর প্রধান ড. আহমদ আল গামেদী কর্মস্থল ও শিক্ষালয়সহ সর্বত্র নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশা করতে পারবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তার এই অভিমতকে ভুল আখ্যায়িত করে তিনি “আর রদ্দুল জামিল” নামে একটি কিতাব প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে গামেদী নিজ অভিমত প্রত্যাহার করে নেন। ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর তিনি কওমি মাদ্রাসার সর্ববৃহৎ শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি নির্বাচিত হন। আইন অনুযায়ী তিনি কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইআতুল উলয়ার সভাপতি।[৮][৯][১০]

তাসাউফ 

তিনি ভারতের আবরারুল হক হক্কী ও ইসহাক সিদ্দিকী, কুয়েতের সৈয়দ ইউসুফ রেফায়ী ও সৈয়দ মাহমুদ হাশেম, বাংলাদেশের দৌলত আলী, আব্দুল মান্নান কাশিয়ানী ও শাহ আহমদ শফীর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং খেলাফত লাভ করেন।

তার শিষ্যদের মধ্যে রয়েছে : ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদের খতীব শায়েখ আলী আব্বাসি, শায়েখ মুহাম্মদ জাকারিয়া, পাকিস্তানের নিজামুদ্দিন শামজাইসৌদি আরবের হাফিজ লুকমান, শায়েখ হাসান মুসা, শায়েখ নাসির বিল্লাহ মক্কী, ভারতের আসআদ আজমী, মদিনার কারী মনিরুজ্জামান, থাইল্যান্ডের গুফরান আহমদ, মালয়েশিয়ার শহীদুল্লাহ ফারুকী, বাংলাদেশের সৈয়দ রেজাউল করিমমুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন সহ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।[২]

পারিবার 

তিনি ২ ছেলে: মাইমুন হাসান ও মাসরুর হাসান এবং ৪ মেয়ের জনক।[২]

প্রকাশনা 

তিনি আরবিবাংলা ও উর্দুতে শতাধিক কিতাব রচনা করেছেন। তিনি ১৯৮৩ সালে মাসিক আল জামিয়া নামে একটি সাময়িকী চালু করেন।[১১] “আল ইরশাদ ইলা সাবিলির রাশাদ” নামক বইয়ে আরব বিশ্বে তার প্রদত্ত বয়ান সমূহের সংকলন করা হয়েছে। তার অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছেঃ[২]

  1. তাফসীরে বুরহানুল কুরআন (৪ খণ্ড)
  2. আল ইমাম আবু ইউসুফ : মুহাদ্দিসান ওয়া ফকিহান
  3. আর রদ্দুল জামিল
  4. দাওয়াতুল হক এবং দাওয়াত ও তাবলিগ
  5. ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তা
  6. নবী পরিবারের প্রতি ভালবাসা
  7. হামদুল বারী বিইযাহি শরহিল বুখারী
  8. যাদুস সালেকীন
  9. হায়াতে আবরার
  10. হায়াতে উসমানি
  11. আল বুরহানুল মুআইয়াদ
  12. তোহফায়ে আবরার
  13. তোহফায়ে সুন্নাহ
  14. আদর্শ মতবাদ
  15. মাওয়েজে হাসানাহ
  16. সিরাতে মুস্তাকিমের সন্ধানে ইত্যাদি।
& Donor Information